• Latest News

    বন আর নদী.Known and Unknown World

    যন্ত্রপাখিটার পেটের ভেতরে একবার ঢুকেছ কি আর কারও কথা শুনতে পাবে না। সারাক্ষণ এমনই একঘেঁয়ে চিৎকার করে যাবে যে সে মাথা ধরে যাবে তোমার। কানে আমি তাই হেডফোন গুঁজে রাখি। আন্ধি ফিল্মটার গান শুনি। মাঝে মাঝে নীচে তাকাই। নজরে আসে আদিগন্ত বিস্তৃত বন। ঘন অরণ্যের মাথাটা সূর্য্যস্নান সেরে নিচ্ছে এবেলা। তারাও জানে ওবেলা নেমে আসবে বাদল। কয়েকটা গাছ জ্বালিয়ে দেবে ক্রুর বাজগুলো। এই বৃষ্টি-অরণ্যের নীচটা কেমন এত উঁচু থেকে দেখা যায়না। এখান থেকে মনে হয় একটা পাথর পড়লেও তা আর ভূমি স্পর্শ করতে পারবে না, এই বিশালত্বে আমাকে যদি কেউ এখন ফেলে দেয় আর কি কখনও পথ খুঁজে পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারব? হাসি আমি। বন ফুরোয় না, চোখে কেমন যেন ধাঁধা লেগে যায়। আন্ধি ছবির গান বদলে অন্য কী একটা গান বাজে। তার সুর ছাপিয়ে হঠাৎ আমার কানে আসে কার একটা কথা, ‘ মহাবনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বহুকাল আগে সাহারা ছিল এমন এক মহাবন। আজ কোথায় হারিয়ে গেল তার পাতার মর্মর?’ হারিয়ে যাবে কেন, মহাবনগুলো কি অভিমানী, ওরা কেন উধাও হয়ে যাবে এভাবে? নাকি ওদের মারতে মারতে তাড়িয়ে দিচ্ছে হাজার হাজার বছর ধরে। নাহ, কথাটা হবে এমন, ‘ মহাবনগুলোকে খুন করে ফেলা হচ্ছে সারা পৃথিবীতেই।’ বেশ খানিকক্ষণ পর চোখে এল বনের মাঝ বরাবর এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া হলুদ একটা রাস্তা। এই রাস্তা গিয়ে কি শেষ হয়েছে পৃথিবীর ঐ প্রান্তে? ঐখানে বুঝি আছে কোন শীতল, শান্ত, সুনীল সমুদ্র? মূহুর্তে আমি গিয়ে পৌঁছুই সে সাগরপাড়ে। সে সমুদ্রের ওপারে কি আছে কে জানে! পাখিটা একটা গোত্তা খেয়ে উঠলে ভাবনায় ছেদ পড়ে যায়। যতটুকু চোখ যায় দেখি শুধু বৃক্ষ। প্রাচীণ। নবীন। দীর্ঘকায়। পৃথুল। হলুদ পথটা হারিয়ে গেছে কোথায় যেন,তার জায়গায় দেখি এবার শুয়ে আছে নৃত্যরতা রমনীর মত দেখতে একটা নদী। এ নদীর নাম সাসান্দ্রা, আসার পথে মারি বলে দিয়েছিল। কী সুন্দর নামটি, যেন গ্রীক পুরানের কোন পুরোহিতের চুরি যাওয়া কণ্যা, এ ঘন জঙ্গলে এনে তাকে লুকিয়ে রেখেছিল লোভী আগামেমনন, পিতার কাছ ফিরে যাওয়ার পথ খুঁজে ফিরেছে সে মহাবনের চারধারে। এখনও বুঝি সে গেয়ে যায় করুণ গান, তাতে অশ্রুর মত ঝরে পড়ে বাওবাব গাছের পাতা? এই বিশাল নিঃসঙ্গ বনে সে কতকাল একা একা ঘুরে ফিরছে কে জানে! একদিন কি সেও অভিমানে হারিয়ে যাবে মহাবনের মত? বুকের সব জল লুকিয়ে রাখবে পৃথিবীর গভীর গোপন কোন কুঠুরীতে? লাল চুলের বেলারুশ মেয়েটা সংকেত দিল বেল্টটা ঠিক করে বেঁধে নিতে। যন্ত্রপাখিটার শব্দটা কানে বাজছে বেশ, পুরোনো ফিল্মের গানগুলো সব শেষ গেছে। মহাবনটাও শেষ হয়ে এসেছে। ঐ তো দেখতে পেলাম কুড়ুল কাঁধে রেখে হেঁটে যাচ্ছে বলিষ্ঠ কাঠুরিয়াগুলো।
    ছবি:
    24/05/2011 - 2:47পূর্বাহ্ন
    24/05/2011 - 2:47পূর্বাহ্ন
    24/05/2011 - 2:47পূর্বাহ্ন
    • Blogger Comments
    • Facebook Comments
    Item Reviewed: বন আর নদী.Known and Unknown World Rating: 5 Reviewed By: Sakir
    Scroll to Top