ফিল্মের কাহিনি বললেও ভুল হবে। কারন এটা ফিল্মের চেয়েও বড় কিছু। এ যে অবাস্তবতাকে নিজের হাতে গড়ে তোলা। ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয়া ভাগ্য নামক ‘হাস্যকর’ শব্দটাকে। মানুষের ইচ্ছাশক্তির সামনে যেকোনো বাধাই যে তুচ্ছ তাই প্রমান করলো মুম্বাইয়ের কিশোরি শ্বেতা কাত্তি। যৌনপল্লীর খুপড়ি ঘরে জন্ম নিয়ে আজ পা রাখলো নিউইয়র্কের বার্ড কলেজে। শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছে আমেরিকার এই বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের। অথচ এই ছোট্ট মেয়েটিকে কী দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই না পার হতে হয়েছে!
মাত্র ১২ বছর বয়সেই ধর্ষণের নির্মম শিকার হতে হয়েছে। কৈশোরে পা দিতে না দিতেই তার উপর হামলে পড়েছে যৌনপল্লীর খদ্দেররা। কিন্তু কোনো দুর্দশাই দমাতে পারেনি তাকে। প্রতিমুহূর্তে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। কঠোর পরিশ্রম করেছে লক্ষ্যে পৌছাতে। স্বপ্ন দেখেছে নিজেকে আলাদাভাবে গড়ার। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাশে পেয়েছে তার মমতাময়ী মাকে।
জীবনযুদ্ধে হার না মানা যোদ্ধা শ্বেতা কাত্তি তার মেধার কারণে আজ আলোচিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এর আগে ভারতীয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছে সে। এরই মধ্যে নিউজউইক ম্যাগাজিনের আলোচিত ২৫ নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছে শ্বেতা। নতুন কলেজে পড়তে যাবার জন্য উদগ্রীব সে। নতুন মানুষ, নতুন সংস্কৃতি এবং নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার স্বপ্নে বিভোর সে। ছুঁতে চায় নিজের স্বপ্নকে। আর এখন শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়া।
শ্বেতা কাত্তির মা একজন কারখানা শ্রমিক। অর্থের অভাবে ভারতের একটি পতিতালয়ের ওপরে সস্তায় বাসা ভাড়া করে শ্বেতাকে নিয়ে থাকতেন তিনি। অন্ধকার গলিতে জন্ম নেয়া শ্বেতার জীবনের শুরুটাও ছিল অবর্ণনীয় কষ্ট আর দুর্ভোগের। আর এসব কথা নিজ মুখে সে জানিয়েছেন সিএনএনকে। সাক্ষাতকারে ছোটবেলার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন এভাবে-
পতিতালয়ের একেবারে ওপরের তলার একটি কক্ষে আমি থাকতাম। কখনো কোনো খদ্দেরের সঙ্গে দেখা হলেই তারা আমাক বিছানায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতো।কিন্তু আমি তো আর সবার থেকে আলাদা হতে চেয়েছি। লেখাপড়া শিখে সত্যিকারের মানুষ হতে চেয়েছি। খদ্দের আর যৌনকর্মীদের মেলামেশার জন্য আমার লেখাপড়ার ক্ষতি হতো। মাঝে মাঝে আমার উপরও অত্যাচার হতো। কিন্তু আমি সেসব গায়ে মাখতাম না।নিজের সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব শ্বেতা দিতে চান তার মাকে। সাক্ষাৎকারে শ্বেতা বলেন-
মা আমাকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন লেখাপড়া করার,সামনে এগিয়ে যাওয়ার। নিজের চেষ্টাতেই মানুষ বড় হয়, বিখ্যাত হয় এমনটাই আমাকে বলেছেন মা।যৌনপল্লীর যৌনকর্মীরা ছিল তার বন্ধু। তার অবিভাবক। সুখে দুখে তারাই তার পাশে দাড়িয়েছে। তাইতো সে তার সাফল্যের ভাগিদার করেছে যৌনকর্মীদেরও-
আমাকে ঘিরে থাকা যৌনকর্মীরা আমার সফলতার অন্যতম ভাগিদার। তারা আমাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন সামনে এগিয়ে যেতে।কারণ আমার মা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানায় ব্যস্ত থাকতেন। যৌনকর্মীরাই আমার সব সুখ আর দুঃখের ভাগীদার।আজ শ্বেতাকে নিয়ে অনেক মাতামাতি। তার জন্য ফান্ডরাইজ করছে অনেকে। শুভ কামনায় সাহস যোগাচ্ছে সারাবিশ্ব। শ্বেতা কাত্তি আজ এক অনুপ্রেরনার নাম।
আমাদের দেশেও যৌনপল্লীতে বেড়ে ওঠা শত শত শিশু রয়েছে। সামাজিকতার করাল গ্রাসে যারা বড় হয় জীবনের প্রতি ক্ষোভ আর ঘৃনা নিয়ে। একটু ভালোবাসা আর সমাজের সহযোগিতা পেলে তাদের মধ্য থেকেও হয়তো বেরিয়ে আসবে এক একজন শ্বেতা কাত্তি। শুধু প্রয়োজন তাদের একটু খোজ নেয়া। আমরা কি পারি না তাদের খোজ নিতে?
সিএনএন সাক্ষাৎকারের লিঙ্ক- http://edition.cnn.com/2013/07/06/world/asia/from-brothel-to-college