• Latest News

    শবে বরাত –আছে, না নাই? পর্ব ২/২

    [১ম পর্ব এখানে]
    আমাদের হাদিস শাস্ত্রে সহীহ ও দুর্বলের বিষয়ের একটা ইতিহাস আছে। এক সময় কুচক্রীরা তাদের ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হিসেবে জাল হাদিস চালিয়ে দিলে তা কঠোর নিয়ম নীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। একথা সত্য যে আমরা দুরূহ নিয়মের মাধ্যমে জাল হাদীসকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি বটে কিন্তু কঠোর নিয়ম-পদ্ধতি আপনাতেই এমন এক দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়েছে যে কিছু কিছু সহিস সেই প্রাচীর অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সহীহ বলে যে হাদিস ভাণ্ডার সংরক্ষণ করেছি তার বাইরেও এমন কিছু হাদিস আছে যা সহীহ হিসেবেই দেখা যায় কিন্তু নিয়ম সেগুলোকে আটকিয়ে দিয়েছে। মধ্য শাবানের হাদিসে এমন কিছু লক্ষ্য করা যায়। এই হাদিসগুলো আল্লাহর মার্জনার বিষয় আলোচনা করে, মানুষের মুক্তির একটা সুযোগের বিষয় আলোচনা করে এবং সর্বোপরি একটি সময় বা কালীন (শাবানের রাতের) মহিমা ও গুরুত্বের কথা বলে। 

    স্থান ও কালীন মহিমা, গুরুত্ব ও পবিত্রতা
    ধর্মীয় অনেক বিষয় স্থান ও কালের পবিত্রতা ও গুরুত্বের ধারনায় সম্পর্কিত। এই সম্পর্কটি ‘বিশ্বাসের’ সাথে জড়িত। এতে গাণিতিক সত্য খুঁজতে গেলে অনেক অংক মিলবে না।
        বিশ্বাসে অনেক স্থান ও কালকে পবিত্র হিসেবে পাওয়া হয় –এটা সব ধর্মেই আছে। হিন্দু ধর্মে গয়া কাশী, ইসলাম ধর্মে মক্কা, মদিনা, জেরুজালেম ইত্যাদি। এগুলো স্থান এবং পবিত্র। স্থান নিকটেও হতে পারে দূরেও হতে পারে। মসজিদ পবিত্র, মন্দির পবিত্র, গির্জা পবিত্র –এগুলো স্থানীয়। আবর্তিত সময়ে পাওয়া যায় শুক্রবার -যাতে মহিমা আছে, পবিত্রতা আছে (ইসলামে)। শনিবার আছে ইয়াহুদি ধর্মে, রবিবার আছে খৃষ্ট ধর্মে। স্থানের ভিতরেও থাকে পবিত্রতার আরও ভিন্ন পরিধি,অন্তঃবৃত্ত। মক্কার এক পরিধি জুড়ে আছে ‘হেরেম’। আর তার ভিতরে রয়েছে আল্লাহর ঘর, ‘ক্বা’বাহ’ শরীফ। সকল মাসের মধ্যে রয়েছে সর্বাধিক পবিত্র মাস ‘রমজান’ শরীফ। সে মাসের শেষ দশদিন হচ্ছে সর্বাধিক উত্তম। কিন্তু তার মধ্যেও রয়েছে একটি বিশেষ রাত, ক্বদরের রাত, যা শেষ দশ দিনের বেজোড় তারিখে ধরা হলেও সাতাইশের রাতই অতি পবিত্র, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।

    শাবান ও তার মধ্য রাত
    মাস হিসেবে শাবান মাসের মহিমা ও কল্যাণ সহীহ হাদিসে প্রতিষ্ঠিত। এ মাসের ব্যাপারে যদি দ্বিমত না থাকে তাহলে আমরা আসতে পারি তার অন্তঃবৃত্তে। এর মধ্যে কী বিশেষ কোন মর্যাদাবান সময় থাকতে পারে যেমন ধর্মীয় অপরাপর স্থান ও কালে পাই? যদি অপরাপর নিয়মের সাথে এর সংগতি থেকে থাকে তাহলে বিতর্কের স্থান কমে আসে। আমরা মূলনীতির সাথে শুধু সঙ্গতিই পাচ্ছি না, বরং মধ্য শাবানের রাত সম্পর্কে অনেক হাদিসের বর্ণনাও পাচ্ছি। এই বর্ণনা মাত্র একটি দুইটি নয়, অনেক। ব্যাপক বর্ণনার কারণে অনেক বড় বড় মুহাদ্দিসগণও, ইবন তাইমিয়্যাসহ, শবে বরাতের মর্যাদা ও মহিমার কথা আমলে নিয়েছেন।
        অপরাপর পবিত্র স্থান ও কালের মত এখানকার অন্তঃবৃত্তের কাল নিয়ে যা বলা হয়েছে ইসলাম ধর্মের মূল বাণীর সাথে তা সঙ্গতিশীল। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য রহমত ও ক্ষমা দানের জন্য যেসব অজুহাত হাজির করে দেন –এটা সেসবের মতই একটি। এই স্থান ও কালের মহিমা ও পবিত্রতা আমাদের জন্য, আল্লাহর নিজের জন্য নয়। স্থান ও কালের ও দিবসের আবর্তনে আমরা যে কালীন হিসেব পাই –তাতে যৌক্তিক পার্থক্য-করণের তেমন কিছু নেই। শুক্রবার সোমবার থেকে ভাল হবে কেন? শেষ রাত তার প্রথম অংশ থেকে ভাল হবে কেন? কিন্তু এগুলো আল্লাহ জাগতিক জীবনের পুণ্য-ধারণায়, পুণ্য পথে চলার এক মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মূল্য দিয়েছেন। তাঁর এই মূল্যদানের স্বীকৃতিতে এগুলো আমাদের কাছে মূল্যবান হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে অনেক রূপক কথা বলেন, আমরা তা বিশ্বাসে ধারণ করে আমল করি। এসব কাজে বেশি যুক্তি চালাতে নেই। না হলে বাছতে বাছতে কম্বল খালি হয়ে যেতে পারে।
        আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং তাঁর বান্দাদের আর্জি শুনেন, তাদেরকে দোয়া করতে আহবান করেন, তাদের মাগফিরাতের কথা বলেন। কিন্তু যুক্তির বিচারে তিনি তো সব সময়ই দুনিয়ার আকাশে থাকার কথা। বাংলাদেশের ভরা-দুপুরে অন্য দেশে যখন শেষ রাত্র, তখনও তো তিনি দুনিয়ার আকাশে আছেন। এসব হচ্ছে রূপক কথা। এসব কথায় আমাদের রূহানিজাত ও মানসিক তায়াজ্জুহের বিষয় বিশ্বাসের মাধ্যমে বহন করা হয়। আধ্যাত্মিক পথ ও পুণ্য জীবনের ব্যবস্থাপনায় বছর, মাস, দিন ইত্যাদিকে এবং বিভিন্ন স্থানকে আল্লাহ আমাদের জন্য সাজিয়ে দিয়েছেন। আমাদের মত পাগল-ছাগলদেরকে মাফ করে দেয়ার বিভিন্ন জরিয়া সৃষ্টি করেছেন, যাতে পরিত্রাণের আশায় তার দিকে রুজু হই এবং আমাদের মানসিকতায় ‘মার্জিত হয়ে গেছি, পুণ্য লাভ করেছি’ -এমন ভাবধারা আসে। এসব জরিয়ার মধ্যে শাবানের রাতটি এক মহিমার রাত, এক ফজিলতের রাত। এটা আমরা বিশ্বাস করি।

    কোরানের ইঙ্গিত, মহিমাময় রাত
    এবারে কোরান থেকে এই বিষয়ে কিছু বলা যাবে কী যাবে না –তা দেখা যেতে পারে।  কোরানে ব্যবহৃত “লাইলাতুল মোবারাকাহ” বাক্যাংশটি অনেকে উল্লেখ করেন। সূরাহ দোখানে আল্লাহ বলেন, إِنَّآ أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ -আমরা এই কোরানকে এক মহিমাময় (বরকতময়) রাতে নাজিল করেছি। আমরা অবশ্যই সতর্কদান করি। (৪৪:৩)
        এখানে উল্লেখিত আয়াতটি শবে ক্বদর হিসেবে আমরা জানি, তবে যারা আয়াতটির অর্থধারা শবে বরাতেও প্রসারিত করেন, তাদের ব্যাখ্যা শুনতে পারি। এই ব্যাখ্যা ধারার তারতিব (ক্রম) হচ্ছে এই যে  মধ্য শাবানের রাতে গোটা কোরান বাইতুল মা’মুর থেকে দুনিয়ার আসমানে আসে এবং এতে এক কালীন গুরুত্ব প্রকাশ পায়। তারপর লাইলাতুল ক্বদরের রাতে খণ্ডাকারের প্রথম অংশ নাজিল হয় এবং তাৎপর্যের দিক দিয়ে এটাই বৃহত্তর এবং মূল তাঞ্জীল। ঐ রাতেই (অর্থাৎ শবে ক্বদরের রাতে) আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আর এভাবেই তাঁরা এই দুই রাত কেন্দ্রিক বর্ণনার সমন্বয় দেখেন।

    কয়েকজন তফসীরকারের কথা
    আল-কুশাইরী (মৃ. ৪৬৫ হি.) তাঁর তফসীর, ‘লাতাইফুল ইশারাত’-এ বলেন, শ’বে ক্বদরের রাতকে ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ বলা হয় আবার শা’বানের ১৫তম রাত্রিকেও বলা হয়। ইবন উজাইবাহ (মৃ. ১২২৪ হি.) তাঁর ‘বাহরুল মাদিদ ফি তাফসীরিল কোরানিল মাজিদ’-এ বলেন ‘এটা লাইলাতুল ক্বাদর হতে পারে আবার মধ্য শা’বানের রাতও হতে পারে। তবে প্রথমটি অধিকাংশ মতই প্রথমটির উপর।’ আল-বাইদাবী (মৃ. ৬৮৫ হি.) তাঁর ‘আনওয়ারুত তানজিল ওয়া আসরারুত তা’উইল’–এ এই কথাও বলেন, ‘এটা ক্বদরের রাত, তবে বারা’আতের রাতও (শা’বানের) হতে পারে যখন কোরানে নাজিলের সূচনা হয়। অথবা লাওহে মাহফুজ থেকে গোটা কোরান একত্রে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করা হয়।’
        আছ-ছা’লাবী (মৃ. ৪২৭ হি.) তাঁর তাফসীর ‘আল-কাশফ ওয়াল বাইয়ান’-এ লাইলাতুল ক্বাদরের পাশে মধ্য-শা’বানের রাতের মতও উল্লেখ করেন। তারপর আলী (রা.) থেকে এই রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন যে নবী (সঃ) বলেছেন, ‘শা’বানের মধ্য-রাত এসে হাজির হয় তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত কর এবং এর পরের দিন রোজা রাখ। নিশ্চয় সূর্যাস্তের পর আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে এসে বলতে থাকেন, ‘আছ কী কেউ ক্ষমা প্রার্থী, আমি ক্ষমা করে দেব। আছ কী কেউ রিজিক প্রার্থী, আমি রিজিক দান করব। আছ কী কেউ  বালা-মুসিবতে, আমি উত্তরণ করব। এভাবেই বলতে থাকবেন ফজর পর্যন্ত।’ আছ-ছা’লাবীও ইকরামার (রা.) সেই মধ্য-শা’বানের হাদিসের কথা উল্লেখ করেন।
        আল-বাগাঁয়ী (মৃ. ৫১৬ হি.)তাঁর তফসীরে লাইলাতুল ক্বাদরের প্রাসঙ্গিকতার দিকে মত প্রকাশের পাশা পাশী মধ্য-শা’বানের রাতের মতটিও উল্লেখ করেন। আল-ক্বাসিম বিন মুহাম্মাদ তার পিতা (মতান্তরে তার চাচা) থেকে বর্ণনা করেন যে রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’লা মধ্য-শা’বানের রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। তিনি প্রত্যেক নফসকে (ব্যক্তি) মাফ করেন তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত যার অন্তরে ঘৃণা বিদ্বেষ রয়েছে,  অথবা যে আল্লাহ সাথে শরীক সাব্যস্ত করে। আল-বাগাঁয়ীও ইকরামার (র.) পূর্বোক্ত বর্ণনার উল্লেখ করেন।
        আল-মাওয়ার্দী (মৃ. ৪৫০ হি.) তাঁর তফসীর ‘আন-নাকতু ওয়াল উয়ূন’-এ লাইলাতুল মোবারাকার দু’টি অভিমত তুলে ধরেন। প্রথমটি মধ্য-শা’বানের রাত আর দ্বিতীয়টি লাইলাতুল ক্বাদর। প্রথমটির সূত্রে ইকরামার কথা উল্লেখ করেন। ইবন আতিয়্যাহর (মৃ ৫৪৬ হি.) তফসীর ‘আল-মুহাররারুল ওয়াজিজ ফী তাফসীরিল কুতুবিল আজিজ’ –এ লাইলাতুল ক্বাদরের কথা বলার পর একথাও সংযোগ করেন, ‘ইকরামা ও অন্যরা বলেন ইহা মধ্য-শা’বানের রাত।’
       তাহলে এখানে আমরা ইকরামার সাথে ‘অন্যদেরকে’ পাচ্ছি। আল-ইতফিশ (মৃ. ১৩৩২ হি.) তাঁর তফসীর, ‘তাইসীরুল কোরান’ -এ লাইলাতুল ক্বাদরের মত ব্যক্ত করেন এবং মধ্য-শা’বানের কথাটি উল্লেখ করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ‘অবতরণের’ অর্থ হল তাঁর রহমত নাজিল করা। আর এই রাত্রে কোরান নাজিলের অর্থ হল গোটা কোরানকে ‘বাইতুল মা’মুর’ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করা, স্থানটি কাবার ঊর্ধ্বাকাশের স্থান। সেখান থেকে জিবরীল (আঃ) খণ্ডাকারে নিয়ে আসেন। এও বলা হয় যে ওহী প্রথমে রবিউল আওয়াল মাসে নবীর (সঃ) নিদ্রায় শুরু হয়। তারপর কোরানের প্রথম অংশ নাজিল হয়,’ইক্বরা বিসমি রাব্বিক’ দিয়ে।’ আল-মাহাল্লী (মৃ. ৮৬৪ হি.) ও সূয়ূতী (মৃ. ৯১১ হি.) প্রণীত প্রসিদ্ধ জালালাইন শরীফে আছে,  “এটি (এই রাতটি)ক্বদরের রাত অথবা মধ্য-শা’বানের রাতও হতে পারে যখন (কোরানকে) সপ্তাকাশের ‘লাওহে মাহফুজ’ (উম্মুল কিতাব) থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করা হয়।” (উপরে, যেসব তফসীরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেই তফসীরগুলো আল-তাফসীর ডটকমে পাওয়া যাবে [১])

    শেষ কথা ও লেখার উদ্দেশ্য
    আল্লাহ এই রাতে যদি দুনিয়ার আকাশে আসেন, যদি তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন, যদি অসংখ্য পাপীতাপী লোক আল্লাহর কৃপা লাভ করেন, যদি তারা গ্লানি নিঃশেষে মুক্তচিত্তে পুণ্যপথে অগ্রসর হন –তবে কোন যুক্তিতে বাধা আসবে? খামাখা কোন ভাল জিনিসে জটিলতা সৃষ্টিতে কী লাভ? কোন বিষয় নিয়ে প্যাঁচা-প্যাঁচি করতে গেলে জট কেবল বাড়তেই থাকবে। জট বাঁধাতে ইচ্ছে করলে অনেক বিষয়ে ‘সহীহ হাদিস’ টেনেও বাঁধানো যেতে পারে। ঝামেলা সৃষ্টি করা যেতে পারে। হাদিস না মানার অভিযোগ অভিযোগ আনা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে কুতর্কে আল্লাহ নেই। তিনি সুতর্ক ও বিশ্বাসে ধরা দেন। যেসব সাধারণ মানুষ এতকাল ধরে শবে বরাত পালন করে আসছে তাদের সামনে বিদ্যার প্যাঁচ মেরে শবে বরাতের গুরুত্ব ও মহিমা খেটো করে ব্যাখ্যা হাজির করা যাবে বটে কিন্তু এতে ধর্মের কোন উপকার হবে না। শুধু এই একটি রাতে কত শত সহস্র লোক আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে ইবাদত বন্দেগী করে, আল্লাহর নাম নেয়, নামাজ পড়ে, জিকির আযকার করে। এই সুবাদে তাদের ছেলেমেয়েরাও ইবাদতের এহসাস লাভ করে –কান্নাকাটি করে। কিন্তু বিদ্যার ঠাকুর এসে যদি সে রাতের দুয়ারে তালা লাগিয়ে দেন তবে সর্বসাধারণ কী করবে?
        মনে রাখা দরকার যে যেখানে বিদআতের স্থান নেই সেখানে বিদআত আবিষ্কার করা ঠিক নয়। মধ্য শাবানের রাতে যদি কেউ বিদআত করে, তবে সেই বিদআতের বিপক্ষেই কথা বলা উচিৎ, সেই দুষ্কর্ম দূর করা করা উচিৎ। এই রাতে নামাজ পড়া, কোরান পড়া, মাসনূন দয়া করা ও জিকির আযকার করা –এসব ঠিক আছে। কিন্তু যারা রাসূলের তরিকার বাইরে গিয়ে নানান গদবাধা প্রথা তৈরি করে -তাত্থেকেও মানুষকে সতর্ক করা দরকার।

    লেখার উদ্দেশ্য
    অবশেষে আমার লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে দুটি কথা বলতে চাই। আমি অনুভব করেছি যে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ রয়েছেন। এক পক্ষ শবে বরাত পালন করতে গিয়ে এমন সব কাজ করেন যা কোরান হাদিসের দৃষ্টিতে গ্রহণীয় হতে পারে না। অপর দিকে দেখা যায় আরেক পক্ষ যেন এটাকে একদম ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। আমি শুধু বলতে চেয়েছি যে এই রাতের গুরুত্ব আছে এবং এই রাতের ইবাদত পুণ্যের কাজ।
        আমরা মানুষ হিসেবে অনেক ধারণা ও ভাবনা সঠিক বলে পোষণ করি, কিন্তু আদপে তা সঠিক নাও হতে পারে। লেখার পূর্বে এই বিবেচনা আমার মনেও ছিল। আমি এর পক্ষে লিখতাম না যদি এর পক্ষে অনেক রেওয়ায়েত না থাকত, যদি তাবেঈনদের একাংশ এর পক্ষে না থাকতেন, যদি মুহাদ্দিসীনদের একাংশ এর পক্ষে না থাকতেন, যদি যুগপৎ ধরে চলে আসা অসংখ্য আলেম ঊলামারা এর পক্ষে না থাকতেন। সর্বোপরি আল্লাহ আমাদের মুক্তির জন্য নানান বাহানা তৈরি করেন, তিনি পরম করুণাময়, অত্যন্ত দয়াবান। তিনি অনেক কবুলিয়্যাতের সময় নির্ধারণ করেছেন, অনেক স্থানকে পবিত্র করেছেন, অনেক কর্মের প্রতিফল দশ থেকে সত্তরগুণ বেশি দেয়ার কথা বলেছেন। এসব কিছু সামনে রেখে মধ্য শাবানের রেওয়ায়েতগুলো বিবেচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে এদের ইসনাদ ভিত্তিক সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও এবারত সহীহ।
        সর্বশেষে ইমাম ইবন তাইমিয়্যার একটি উদ্ধৃতি দিয়ে সমাপ্তি টানছি। তিনি বলেন, “মধ্য শাবানের রাত, এই রাতের ফজিলতের উপর অনেক অনেক হাদিস ও আছার বর্ণিত হয়েছে। পূর্ববর্তীদের (সলফে-সালেহিনদের) একাংশ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তাঁরা ঐ রাতে নামাজ পড়তেন। তবে প্রত্যেক ব্যক্তির নামাজ ছিল একা একা [অর্থাৎ জামাতবদ্ধ বা দলীয় নয়]। পূর্ববর্তীরা এতে (অর্থাৎ ইবাদত সংক্রান্ত আমলে) অগ্রবর্তী ছিলেন। এই ইবাদতের পিছনে তাদের দলিল (হুজ্জাহ/যুক্তি) ছিল সুতরাং এটাকে নিষেধ করা যাবে না, এনকার করা যাবে না।”  [২]

    রেফারেন্সেস
    _________________
    [১] আল তাফসীর, [অনলাইন, আরবী],  প্রাপ্তব্যস্থান, http://www.altafsir.com/)
    [২] উইকিপিডিয়া, লাইলাতু মিনতাসিফি শাবান [আরবী], অনলাইন। প্রাপ্তব্যস্থান:
    http://ar.wikipedia.org/wiki/%D9%84%D9%8A%D9%84%D8%A9_%D9%85%D9%86%D8%AA%D8%B5%D9%81_%D8%B4%D8%B9%D8%A8%D8%A7%D9%86 [Accessed on 18/06/2012]
    • Blogger Comments
    • Facebook Comments
    Item Reviewed: শবে বরাত –আছে, না নাই? পর্ব ২/২ Rating: 5 Reviewed By: Sakir
    Scroll to Top